Type Here to Get Search Results !

বাংলায় বাউল গান-চর্চার ঐতিহ্য দীর্ঘকালের পর্ব -০৩

 

বাংলায় বাউল গান-চর্চার ঐতিহ্য দীর্ঘকালের পর্ব -০৩

ভণ কইসেঁ সহজ বোলবা জায়

হাবিব আর রহমান

গত শতাব্দী থেকে এ-পর্যন্ত বাউল-ফকিরদের সম্পর্কে দুই বাংলার গবেষক-লেখকরা বেশকিছু বই লিখেছেন। তা সত্ত্বেও শিক্ষিত নাগরিক সমাজে এই বিশেষ সম্প্রদায় সম্পর্কে কৌতূহল ও জিজ্ঞাসা এখনো যথেষ্ট মাত্রায় রয়েছে। সাম্প্রতিককালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত অকালপ্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও গবেষক-লেখক সোহারাব হোসেন (১৯৬৬ ২ মার্চ ২০১৮)-রচিত সহজ বাউল (পুনশ্চ, ২০১৭) বইটি পড়তে গিয়ে এ-কথা আমাদের মনে হয়েছে। মিতপরিসর বইটিকে লেখক নিজে বলেছেন হ্যান্ডবুক

বাউল শব্দটির উৎপত্তি এবং বাউল কারা এ নিয়ে মতভিন্নতা কম নয়। শব্দটির উৎস যা-ই হোক না কেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে হয় বাউলের স্বরূপগত পরিচয়। সোহারাব হোসেনের বইয়ে উদ্ধৃত দুদ্দু শাহের একটি গানের নিহিতার্থের দিকে নজর দিলে বাউলের স্বরূপ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণায় পৌঁছতে পারা সম্ভব বলে মনে হয়। গানটি এই :

যে খোঁজে মানুষে খোদা সেই তো বাউল
বস্ত্ততে ঈশ্বর খুঁজে পায় তার উল।
পূর্ব পুনঃজন্ম না মানে
চক্ষু না দেয় অনুমানে
মানুষ ভজে বর্তমানে হয় রে কবুল।

মানুষে সকল মেলে
দেখে শুনে বাউল বলে
দীন দুদ্দু কি বলে লালন সাঁইজির কুল।

গানটিতে খোদ-এ-খোদাতত্ত্ব অর্থাৎ নিজের দেহের মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান, তাঁকে বাইরে কোথাও কিছুতে খোঁজার প্রয়োজন নেই এই মতের প্রকাশ ঘটেছে। এই মতের অনুসারীদের যদি বাউল বলা যায়, তাহলে ইসলাম ধর্ম থেকে উদ্ভূত সুফিতত্ত্বের অনুসারীদের বাউল বলতে বাধা থাকার কথা নয়। সে-হিসেবে হিন্দু তান্ত্রিক, বৌদ্ধ ও বৈষ্ণব সহজিয়াপন্থি, ফকির-দরবেশ সবাইকেই বাউল অভিধা দেওয়া যেতে পারে। কেননা এঁদের সকলেরই লক্ষ্য এক নিজের দেহের মধ্যে পরমের সন্ধান। সেই পরম মহানন্দময়। আর যদি কেবল সংসারবিবাগি দেহসাধকদের বাউল বলা হয়, তাহলে বেশ কয়েকটি তর্ক এসে হাজির হয়। সোহারাবের সহজ বাউল পড়লে বোঝা যায় বাউল শব্দটিকে তিনিও বৃহত্তর অর্থে গ্রহণ করেছেন। সে-বৃত্তান্ত আলোচনাক্রমে বলবার চেষ্টা করা যাবে।

Source: kaliokalam.com

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies