Type Here to Get Search Results !

বাংলায় বাউল গান-চর্চার ঐতিহ্য দীর্ঘকালের পর্ব -০৭

Top Post Ad


বাংলায় বাউল গান-চর্চার ঐতিহ্য দীর্ঘকালের পর্ব -০৭

ভারতে, বিশেষ করে বাংলা ও সন্নিহিত অঞ্চলে তন্ত্রসাধনার উদ্ভব বহু প্রাচীনকালে। ধারণা করা যায়, বৌদ্ধ বজ্রযানপন্থিদের সহজিয়া সাধনায় এর প্রভাব পড়েছিল। প্রভাব মানে হুবহু প্রভাব নয়, রূপান্তরিত প্রভাব। সহজ বাউলের বাউলের দেহতত্ত্ব দেহসাধননামাঙ্কিত প্রথম অধ্যায়ে তিন তারের সাধনার বিবরণ দিতে গিয়ে প্রসঙ্গটি এসেছে। লেখক আমাদের জানিয়েছেন, শাক্তমতের তিন তার ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না বৌদ্ধ সহজিয়ামতে ডানগা, বামগা ও মধ্যগা নাড়ি। মধ্যগাকে অবধূতিকা নামেও চিহ্নিত করা হয়। বৌদ্ধ সাধক ডানগা নাড়িকে ডান নাক থেকে নাভি পর্যন্ত ও বাঁগা নাড়িকে বাঁ নাক থেকে নাভি পর্যন্ত কল্পনা করেন। আর মধ্যগা হচ্ছে সুষুম্না বা মেরুদ-। এই মতে ডানগায় সৃষ্টি আর বাঁগায় সংহার। সংহার বা পতনকে নাভিতে বেঁধে বোধিচিত্তকে জাগিয়ে সুষুম্না বরাবর ওপরে তুলে মাথায় নিতে পারলে তবেই সিদ্ধি। নর-নারীর দৈহিক মিলনের ফলে যে-পরমানন্দ, যে-এককেন্দ্রিক উপলব্ধিময় ধ্যান তাকেই বজ্রযানীরা বলেন বোধিচিত্ত।

বেশকিছু চর্যায় সাধনার এই প্রক্রিয়াকে চমৎকারভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন শবরপাদের উঞ্চা উঞ্চা পাবতপদটির কথা বলা যেতে পারে। এই পদে আছে তিআ-ধাউ খাট পড়িলা সবরো মহাসুখে সেজি ছাইলি’ – তিন ধাতুর খাট পাতা হলো, শবর মহাসুখে শয্যা বিছাল। কোথায় থাকে সেই মহাসুখ চক্র বা বোধিচিত্ত? তা থাকে দেহরূপ পবর্তের উচ্চ শিখরে অর্থাৎ মসিত্মষ্কে – ‘উঞ্চা উঞ্চা পাবত তহিঁ বসই সবরী বালী।বৌদ্ধ-সহজিয়া সাধকদের সাধনতত্ত্বের চমৎকার কাব্যরূপ ঘটেছে, এমন দু-চারটি চর্যাপদ বেছে নিয়ে সোহারাব যদি এঁদের দেহসাধনার রহস্যকথা আরো কিছু বলতেন তবে তাঁর সহজ বাউল আরো সমৃদ্ধি লাভ করত বলে মনে হয়।
কালক্রমে শাক্ত বা বৌদ্ধ-সহজিয়াদের অনুষঙ্গে তিন তারের সাধনরূপ বাউল সাধনাতেও যুক্ত হয়েছে, তবে ভিন্ন ভিন্ন নামে ও মাত্রায়। যেমন ত্রিবেণীঘাট (নারী-যৌনাঙ্গ)। ত্রিবেণীঘাটের ত্রিবেণী ধারা সরস্বতী (ডানগা), যমুনা (বামগা) ও গঙ্গাধারা (মধ্যগা) হিসেবে কল্পিত। সোহারাব জানাচ্ছেন, ‘… এই ত্রিধারা নারীর
রজঃ-নিঃসরণের তিন দিনের ধারা বৈ-ভিন্ন-কিছু নয়। তিন-তার এখানে বাউলের চন্দ্র সাধনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

আবার বাউলের যে খোদ-এ-খোদাতত্ত্ব বা মানুষতত্ত্ব, সেখানে তিন-তার তারই পরিপূরক মাত্রায় ব্যবহৃত। এখানে তিন-তার ত্রিবেণী ধারার বিবর্তিত রূপ হিসেবে আল্লাহ-আদম-রসুল বা ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর হিসেবে কল্পিত।

Source: kaliokalam.com


Below Post Ad

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Hollywood Movies