Type Here to Get Search Results !

বাংলায় বাউল গান-চর্চার ঐতিহ্য দীর্ঘকালের পর্ব -০১

বাংলায় বাউল গান-চর্চার ঐতিহ্য দীর্ঘকালের 

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন, ‘কীর্তনে আর বাউলের গানে আমরা দিয়েছি খুলি,/ মনের গোপনে নিভৃত ভুবনে দ্বার ছিল যতগুলি।’ (‘আমরা’) হ্যাঁ, বাউল গান নিভৃত মনের ও গোপন সাধনার গান। মনের মানুষকে খুঁজে নেওয়ার গান। সেই মধ্যযুগে যার সূচনা, এই একুশ শতকে এসেও তার ধারা থেমে যায়নি। বাউল গানের তত্ত্ব আর রসভাষ্য রচনায় গবেষকরা ক্লান্তিহীন, সেই গবেষণার ভুবনে কবি ও প্রাবন্ধিক শান্তি সিংহ তাঁর ভূমিকা ও সামর্থ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। লোকসংস্কৃতি ও সাহিত্যের নিরলসচর্চায় তাঁর অবদান যথেষ্ট। তথাকথিত বাবু-গবেষক না-হয়ে মেঠো-গবেষক হতে তিনি লজ্জিত হন না। মাঠ-ঘাট-কুটির-আখড়া সর্বত্র তাঁর যাতায়াত। ছাই ঘেঁটে সোনা তুলে আনাই তাঁর সাধনা। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বাউল গান প্রসঙ্গে গ্রন্থটি, যা বিপুল পরিশ্রম ও অধ্যয়নের ফসল। বিশেষত বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার লুপ্ত ও বিস্মৃতপ্রায় বাউল গানগুলো তিনি সংগ্রহ ও সংকলিত করেছেন। যাঁরা বাউল গান ও সাধনা নিয়ে চর্চা করেন, তাঁদের কাছে এটা বড় প্রাপ্তি মনে করি।

বাংলায় বাউল গান-চর্চার ঐতিহ্য দীর্ঘকালের। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের উৎসাহ ও চেষ্টা কারোর অজানা নয়। ইংরেজিতেও অনুবাদ করে বাউল গানকে তিনি বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। শান্তি সিংহ এক মহত্তর ভাবনায় কাজ করেছেন। আমরা যে-গান জানি, পড়ি, তার ভেতরেও অন্য তাৎপর্য আছে তা বাউলেরা বলেন, সে-তত্ত্ব লেখক নির্দেশ করেছেন। বাউল তত্ত্ব এবং লালন ফকির নিয়ে তাঁর আলোচনা সুস্পষ্ট পরিচ্ছন্ন। শুধু পান্ডিত্য নয়, রসগ্রাহিতাও আছে। যার সম্যক প্রকাশ দেখি তাঁর বাউল গানে বৈষ্ণবীয় ভাব-ভাবনর ব্যাখ্যায়। লালনের বাউল গান মানেই অচিন পাখির তত্ত্ব, আলেক তত্ত্ব, জাত-ধর্মের দ্বন্দ্ব দূর করার গান। শান্তি সিংহ অজস্র গান সংকলিত ও বিন্যস্ত করে দেখালেন, বৈষ্ণব পদাবলীর চৈতন্যলীলা’, ‘কৃষ্ণলীলাও লালন কীভাবে বাউল            গানে ব্যক্ত করেছেন। গানগুলো নিশ্চয় পদাবলীনয়, অথচ            বাউল-পদাবলি বটে। আবুল আহসান চৌধুরীর লালনসমগ্র, তাঁর দীপবর্তিকা। তিনি আলোকার্থী হয়ে যে পথনির্দেশ করেছেন, সেখানেই তাঁর নিজস্বতা প্রকাশ পেয়েছে।

বাউল গান প্রসঙ্গে বইটি দুটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে বাউলতত্ত্ব, সাধনা প্রসঙ্গ এবং পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার দুর্লভ বাউল গানের সংগ্রহ। দ্বিতীয় পর্বে লালন-প্রসঙ্গ এবং তাঁর বাউল গানে চৈতন্য-লীলা, কৃষ্ণলীলার নানা চিত্র তিনি দিয়েছেন। এই পর্বটি অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক। প্রায় প্রতিটি পদ চুনে-চুনে শান্তি সিংহ লালনের বৈষ্ণবীয় ভাবনার অভিনবত্ব ও মৌলিকত্ব দেখাতে চেয়েছেন। যেমন কৃষ্ণের বাঁশির সুরে যমুনাও উজানে বয় এই লোকবিশ্বাস মেনে লালন লেখেন, ‘নইলে কিগো তার বাঁশির সুরে ধরি/ ফেরে গঙ্গা।গবেষক মনে করেন, ‘ভাবাবেশে লালন, যমুনার পরিবর্তে গঙ্গাগেয়েছেন।লালনের বাৎসল্য ভাবনায় বলরাম দাসের পদ ছায়া ফেললেও লালনের গোপাল শুধু মানবিক ভাবের নয়, ঐশী ভাবেরও। তাই বলেন, ‘লালন বলে, তার ভাব বুঝা ভার/ এ সংসারে।অন্যদিকে মনের মানুষ ভাবনাও লালন ভোলেন না।

Source: kaliokalam.com


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies